রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২০

স্বাস্থ্য সু-রক্ষায় মধুর ব্যবহার

মধু একটি খুব উপকারী খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ। জন্মের পর নানা দাদীরা মুখে মধু দেয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন । প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে,মিষ্টি হিসেবে, চিকিৎসা ও সৌন্দর্যচর্চাসহ নানাভাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে। শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অনেক।

প্রাণরসায়নবিদ প্রফেসর পিটার মোলান নিউজিল্যান্ডের ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হানি রিসার্স ইউনিট’-এর ডাইরেক্টরদের মধ্যে একজন। গত দুই দশক ধরে প্রফেসর মোলানের ল্যাবরেটরিতে মধুর জীবাণুবিধ্বংসী গুণাগুণ নিয়ে অধিকাংশ গবেষণা কার্যক্রম চলে আসছে। তিনি বলেন, “রোগ প্রতিকারে আদিকাল থেকে মধুর ব্যবহার এখন আর কোন বিশ্বাসের ব্যাপার নয়।” রোগ প্রতিকারে মধুর আশ্চর্য ক্ষমতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এত মজবুত যে, তিনি মধু দিয়ে তার স্ত্রী ও নিজের রোগ প্রতিকারের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর একটি ফোঁড়া হয়েছিল। বাজারে প্রচলিত কোন মলমই যখন ফোঁড়া নিরাময়ে কার্যকর হচ্ছিল না, তখন আমি একদলা মানুকা মধু মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে গলিয়ে স্বচ্ছ পাতলা কাপড়ের ওপর ঢেলে গজটি ফোঁড়ার উপর বসিয়ে দিই। গলিত মধুর বিক্রিয়ার কারণে প্রয়োগকৃত স্থানের কিছু জায়গা পুড়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে মানুকা মধু ফোঁড়সহ পোড়া ক্ষতস্থান অতি দ্রুত সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়।

জীবাণুনাশক হিসেবে মধুর প্রতি আকর্ষণ বাড়ার মূল কারণ হলো বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ এন্টিবায়োটিক বর্তমানে বহু জীবাণুর বিরুদ্ধে তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। জীবাণুর প্রতি ক্রমবর্ধমান এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যন্স চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, মধু মেথিসিলিন রেসিস্টেন্ট জীবাণু স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস কর্তৃক সংক্রমণের ফলে ক্ষতস্থান সারাতে পারে। বেশ কিছুদিন ধরে মধুর ড্রেসিং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ বছরের প্রথম দিকে কানাডাতেও ড্রেসিং এন্টিমাইক্রোবায়াল হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন মানুকা মধু ড্রেসিং বাজারজাতকরণের জন্য লাইসেন্স প্রদান করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
Benefits of Honey


অন্যদিকে, মধু সংগ্রহকারী কর্মী মৌমাছি ফুল ও ফল থেকে সংগৃহীত রসে গ্লুকোজ অক্সিজেন নামের একটি এনজাইম নিঃসরণ করে। মধু সিক্ত ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসার পর গ্লুকোজ অক্সিজেন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামের একটি রাসায়নিক উপাদান উৎপন্ন করে যা সংক্রামক রোগে জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, মৌমাছি কর্তৃক উৎপাদিত বিশেষ কিছু পদার্থ শরীরে টিউমার বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম। যদিও এসব গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবুও আশা করা যায় ফলপ্রসূ গবেষণার মাধ্যমে মধু অদূর ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

Benefits of Honey

প্রাচীন গ্রিসের খেলোয়াড়েরা মধু খেযে মাঠে নামতো ; কারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে মস্তিষ্কের ক্রিয়াক্ষমতা ভালো থাকে। নিয়মিত মধু পানে রোগ-বালাই হ্রাস পায় কেননা মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডায় মধু ভালো কাজ করে ; পেনসিলভেনিয়া স্টেট কলেজের পরীক্ষায় দেখা গেছে বাজারে যত ঔষধ পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশী কার্যকর এক চামচ মধু। মধুর ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা উচ্চ। মধু হজমে সাহায্য করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।[৩] প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। Huge Benefit of  Honey

মধু : বহু রোগের পথ্য
ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য করে।মধুতে আছে ফরুকটোজ, যা মানুষের লিভারে শক্তি সংরক্ষণ করে এবং রাতব্যাপি মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে মধু। মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে সর্দির মতো রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।
পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে,
এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকর।
২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকর।হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু।

এর আগে আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে।

মধুতে যা বিদ্যমানঃ
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ। ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫-৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।

শক্তি প্রদায়ী :
মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।

হজমে সহায়তা :
এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।

রক্তশূন্যতায় :
মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে :
বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

অনিদ্রায় :
মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।

যৌন দুর্বলতায় :
পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন।

প্রশান্তিদায়ক পানীয় :
হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়।

মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় :
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।

পাকস্থলীর সুস্থতায় :
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।

দেহে তাপ উৎপাদনে :
শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।

পানিশূন্যতায় :
ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে :
চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।


রূপচর্চায় মধু :
শুধু শরীর গঠনে নয় , রূপচর্চায়ও মধুর ব্যবহার সর্বজন স্বীকৃত । যে কোন ধরনের ত্বকেই মধু ব্যবহার করা যায়। স্বাভাবিক , তৈলাক্ত, শুষ্ক কিংবা রুক্ষ যে কোন ত্বকের জন্য আর্দ্রতার প্রয়োজন । মধু ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ঘাটতি কমায়, উজ্জ্বল আভা আনে , বলিরেখাও দূর করে। মধুর যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত । গ্রীক সুন্দরীরা মধু পান করে যৌবন ধরে রাখতেন । কিংবদন্তী সুন্দরী ক্লিওপেট্রা মুখে মধু মাখতেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য মিসরের মায়েরা শিশুদের মধু পান করাতেন । এছাড়া মধু সহযোগে বিভিন্ন ক্রীম তৈরী করে মুখে লাগানো এমনকি শুধু মধু ক্রীমের মত ব্যবহার করলে মুখের বিভিন্ন দাগ দূর হয়ে উজ্জ্বলতা, মসৃণতা ফিরে আসে।

ওজন কমাতে :
মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে,মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।

হজমে সহায়তা :
মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে।

গলার স্বর :
গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে।

তারুণ্য বজায় রাখতে :
তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।

হাড় ও দাঁত গঠনে :
মধুর গুরুত্বপূর্ণউপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।

রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে :
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়ে :
পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে।

হাঁপানি রোধে :
আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায় :
দু চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায় ।প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত ।

রক্ত পরিষ্কারক :

এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রন খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে।

রক্ত উৎপাদনে সহায়তা :
রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।

হৃদরোগে :
এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় :
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও যোগান দেয়।মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকর।বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।

জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই :
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ওজন কমাতে লেবু-মধু পানীয় :
ওজন কমাতে অনেকে অনেক কিছু পান করেন বা খান। যেমন : ওজন কমানোর চা, সোনাপাতা, ওজন কমানোর ওষুধ ইত্যাদি। এগুলোর কোনো কার্যকারিতা আছে কিনা তা সন্দেহ আছে। থাকলেও এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদান মধু ও লেবু আসলেই যে কার্যকরী, তা পরীক্ষিত এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত ও স্বীকৃত । ওজন কমাতে দুটি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর পানীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন । ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে।

কেন ওজন কমায়?
মধুতে যদিও চিনি থাকে, কিন্তু এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে এটি সাধারণ চিনির মতো ওজন না বাড়িয়ে কমায়। কারণ সাধারণ চিনি হজম করতে আমাদের শরীর নিজের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল খরচ করে, ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। এসব উপাদান ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমাতে বা ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে যখন আমরা বেশি চিনি খাই, তখন অধিক ক্যালরি শরীরে জমা ছাড়াও এসব পুষ্টি উপাদানের চিনি হজম করতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই ওজন বাড়াতে পারে। কিন্তু মধুতে এসব উপাদান থাকার ফলে এগুলো হজমে সহায়ক এবং ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমায়। তাই এই পানীয় ওজন কমায়। তাছাড়া সকালে উঠেই শরীর যদি পানি জাতীয় কিছু পায়, তবে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে একই রকম শারীরিক পরিশ্রম করেও আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ওজন কমতে পারে।

লেবু-মধু পানীয় বানানোর প্রণালী
এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানি, আধা চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ মধু। গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন লেবু-মধু পানীয়। আপনি চাইলে এর সঙ্গে সবুজ চা মেশাতে পারেন।

যা লক্ষ্য রাখবেন
- আগে পানি হালকা গরম করে তারপর লেবু ও মধু মেশাবেন। মধু কখনোই গরম করতে যাবেন না।
- যদি ঠাণ্ডা পানিতে এটি পান করেন, তবে বিপরীত ফল হবে, মানে আপনার ওজন বাড়বে।

লেবু-মধু পানীয়ের উপকারিতা
এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করে। শরীরের ভেতরের নালীগুলোর সব ময়লা বের করে দেয়।
- মেটাবলিজম/হজম শক্তি বাড়ায়, ফলে ওজন কমে। ঠাণ্ডা লাগলে এই পানীয় কফ বের করতে সাহায্য করে এবং ঠাণ্ডা লাগলে গলাব্যথা করলেও এটি উপকারী ।
- এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- শরীরে শক্তি বাড়ায়, অলসতা কমায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

কখন লেবু-মধু পানীয় খাবেন?
সাধারণত সকালে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি খাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সকালের নাস্তা খেতে পারেন।

লেবু-মধু পানীয় খাবার সাবধানতা :
তাছাড়া লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এই পানীয় খাবার সঙ্গে সঙ্গে কুলি করবেন, অথবা পানি খাবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য এই পানীয় শুধুই সহায়কমাত্র। সম্পূর্ণ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে অবশ্যই থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর/ব্যালেন্সড ডায়েট, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।

Share this site to your friends to see more ideas about Benefits of Honey

শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

মধুর ঘনত্বই কি মধু খাঁটি হওয়ার মাপকাঠি? সুন্দরনের মধু এত পাতলা হয় কেনো?

মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হওয়া নিয়ে আমাদের মনে নানান রকমের প্রশ্ন জাগে। আসুন জেনে নেওয়া যাক মধু ঘন বা পাতলা হওয়ার কারন:





















মধু পাতলা হয় কেনো?
মধুর তরলতা নির্ভর করে নেকটার সংগ্রহের উৎসের উপর। ফুল ভেদে নেকটারের ঘনত্ব বিভিন্ন রকমের হয়, কোনটা পাতলা আবার কোনটা ঘন। এর পেছনে অনুঘটক হিসাবে কাজ করে ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং মাটির আদ্রতার পরিমাণ। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে মরু অঞ্চলের ফুলের নেকটার থেকে উৎপন্ন মধু অপেক্ষাকৃত ঘন হয় কারণ সেখানকার আবহাওয়া এবং মাটিতে ময়েশ্চার অনেক কম, পক্ষান্তরে যে অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বাতাসে এবং মাটিতে ময়েশ্চার বেশি, সেই অঞ্চলের মধু পাতলা হয়। যেমন চায়না, তাইওয়ান,সুন্দরবনের মধু উপরোক্ত কারণে পাতলা হয়। অনেকে ভুল ধারণা বশত মধুর ঘনত্ব দিয়ে মধুর আসল নকল যাচাইয়ের চেষ্টা করে, যেটা বিজ্ঞানসম্মত তো নয়ই বরং কুসংস্কার ই বলা যেতে পারে।

মধু পাতলা হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ফুল থেকে মৌমাছি নেকটার সংগ্রহ করে মধু তৈরি করে চাঁকে রাখার পর তাতে জলীয় অংশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, শ্রমিক মৌমাছিরা পাখা দিয়ে বাতাস করে পানির বাষ্পীভবনের মাধ্যমে এই জলীয় অংশের পরিমাণ কমিয়ে উপযুক্ত পর্যায় নিয়ে আসে এবং মোম দিয়ে ঢাকনা তৈরি করে ষড়ভুজাকৃতি ঘর গুলোকে ঢেকে দেয়। মৌচাষ বিদ্যার পরিভাষায় একে ‘ক্যাপিং’ বলা হয়। এই ক্যাপিং হওয়ার আগে মধু সংগ্রহ করলেও মধু পাতলা থেকে যায়। একই চাঁকের ক্যাপিং অংশের মধুর ঘনত্ব আনক্যাপিং অংশের তুলনায় বেশি হতে পারে।

সুন্দরনের মধু এত পাতলা হয় কেনো?
সুন্দরবন সমূদ্র তীরবর্তী হওয়ায় এবং ভেতরে ছোটবড় অনেক খাল থাকায় এখানকার পরিবেশে আদ্রতার পরিমান অনেক বেশি হওয়ায় মধুর উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে বিধায় সুন্দরবনের মধু অনেক পাতলা হয়। মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নাটোর, পাবনা সহ বিভিন্ন অঞ্চলের চাষকৃত সরিষা, কালিজিরা, ধনিয়া, লিচুর মধুর গড় ময়েশ্চার যেখানে ১৮-২২%, সেখানে সুন্দরবনের মধুতে ময়েশ্চারের পরিমাণ প্রায় ২৬-২৭%। এবং ময়েশ্চারের এই আধিক্যতাই সুন্দরবনের মধু পাতলা হওয়ার মূল কারণ এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য। সুতরাং মধু পাতলা দেখে কিংবা মিষ্টতার আধিক্যের কারণে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। সিজনের প্রথম যে মধুটা আহরিত হয় সেটার মিষ্টতা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি থাকে।

মধু ঘন হয় কেনো?
আমাদের দেশের সুপারশপ গুলোতে নামিদামি বিদেশি ব্রান্ডের যে মধুগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো উচ্চ তাপীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলীয় অংশ কমিয়ে আনা হয় বিধায় এই মধুগুলো অনেক ঘন দেখায়, কিন্তু উচ্চ মাত্রায় তাপ প্রয়োগের ফলে মধুর অনেক প্রাকৃতিক গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি অনেক মধু বিশেষজ্ঞ একে মধু বলে স্বীকার ই করতে নারাজ।

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯

মধুর উপকারিতা (Benefit of Honey)




বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য বিখ্যাত। সুন্দরবনের বেশীরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে পাওয়া যায়। সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে। মধু বিক্রি তাদের মূল জীবিকা। মধুর অন্যতম গুণ হল এটি কখন নষ্ট হয় না।প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রর্তা থাকে। আর্দ্রর্তার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্‌ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী কমিয়ে দেয়।

মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভকে বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ঠিক থাকে। নিয়মিত মধু খেলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। কেননা মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডায় মধু ভালো কাজ করে থাকে শরীরের জন্য। মধুর ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা অধিক। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশি কার্যকর।
মধু হল তরল পদার্থ। এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ। যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি করে। যা মৌচাকে সংরক্ষণ করএ হয়। মধু উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। এর স্বাদ খুবই মিষ্টি। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে চিনির বদলে মধু ব্যবহার করা হয়। এর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকে চিনির অপেক্ষা মধু বেশি পছন্দ করে থাকে।

প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে মধু বেশ উপকারী ও কার্যকরী জিনিস তরল পদার্থ। প্রাচীনকাল থেকেই মধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও রূপচর্চায় ব্যবহার করা চলে আসছে।

সাধারণ ঠান্ডা ও জ্বরের ঘরোয়া চিকিতসায় মধু বেশ উপকারী। এক কাপ গরম জলে মধু, লেবু, দারুচিনি ও আদা মিশিয়ে খেলে জ্বর কমে যায়। দ্রুত নিরাময়ের জন্য দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর এই মিশ্রণ খাওয়া যায়। তাছাড়া মধু হজমের জন্য ভালো। এতে যে শর্করা তা সহজে খাবার হজম করিয়ে দেয়। কারন এতে যে ডেক্সটিন থাকে তা রক্তে গিয়ে দ্রুত কাজ করে। মধু পেটরোগা মানুষের জন্য খুবই উপকারি।

মধুতে আছে কপার, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ। যা রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখে। রক্ত স্বল্পতা হতে দেয় না। মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে থাকে। ফলে অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না। মধু ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি প্রক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করে শরীরে। ফলে তা শরীরের হরমোনাল প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে। যারা অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় ভুগছেন তারা এক গ্লাস গরম জলে অথবা হারবাল চায়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিনে একবার করে পান করুন।

মধু প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে এবং অনেক সময় ধরে এটি ধরে রাখে। ১ চা চামচ মধু নিয়ে ত্বকে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সংবেদনশীল ও ব্রণযুক্ত ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে বেশ কার্যকরী মধু। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া দূর করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় সহজে। লিপ বাম হিসেবেও মধুর ব্যবহার হয়। মধু নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখলে ফাটা ঠোঁটের থেকে মুক্তি মেলে।

ত্বকের পাশাপাশি মধু চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়। মধুকে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক কাপ মধু নিয়ে এর সঙ্গে এক কাপের চারভাগের এক ভাগ অলিভ অয়েল মিশিয়ে হালকা গরম করতে হবে। চুলে লাগিয়ে কিছু সময় ধরে তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে মধু বেশ উপকারী। এছাড়াও ত্বকের দাগ দূর করতেও এটি বেশ কার্যকরী মধু। এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে ম্যাসাজ করে এরপর একটি গরম জলে ভেজানো কাপড় নিয়ে মুখের উপর দিয়ে রাখতে হবে। ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রতিদিন এটি করলে ত্বকের জেল্লা বাড়বে।

তাছাড়া মধু চোখের জন্য খুবই ভালো। মধু গাজরের রস দিয়ে খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। কাটা ও পোড়ার জায়গায় মধু লাগালে ইনফেকশন হওয়া আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের নখ ভঙ্গুর ও দুর্বল তারা এক টেবিল চামম মধুর সঙ্গে এক কাপের চারভাগের একভাগ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে ঐ মিশ্রণের মধ্যে নখগুলো ডুবিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে হাত ধুয়ে ফেলুন। ফলাফল হাতেনাতে পাবেন।












বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

প্রতিদিন ১ চামচ মধুর এক ডজন স্বাস্থ্য উপকারিতা

মধু তার অসাধারণ ঔষধি গুনের কারনে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক দিকের জন্যই নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।
সর্বগুন সম্পন্ন এই মধুর গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা, সৌন্দর্য চর্চা- কোথায় নেই মধুর ব্যবহার? আসুন দেখে নেয়া যাক মাত্র এক চামচ মধু কি কি অসাধারণ উপকারে লাগতে পারে আপনার।

১)
মধু হিউম্যাকটেন্ট যৌগে সমৃদ্ধ। এই যৌগটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে এবং ত্বকের উপরিভাগের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। হিউম্যাকটেন্ট যৌগটি ত্বককে নমনীয় করতেও সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে দীর্ঘদিন বার্ধক্যের ছাপ মুক্ত। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু রঙ চা কিংবা দুধের সাথে খেতে পারেন। সেই সাথে আপনার রোজকার ফেস প্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন মাত্র এক চামচ মধু। মধু ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে ও মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে।

২)
মধু শরীরের ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। মধুতে মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। কোথাও পুরে, কেটে গেলে ক্ষত স্থানে মধুর একটি পাতলা প্রলেপ দিয়ে দিন। ব্যথা কমবে ও দ্রুত নিরাময় হবে। মধুতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পূঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।

৩)
মধুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ছত্রাক ও অন্যান্য কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে ঠিক করতে সাহায্য করে ও নতুন ত্বক গঠনে ভূমিকা রাখে। চর্মরোগ হলে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে মধু লাগান। এক চামচ মধুর সাথে অল্প পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

৪)
মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরের চামড়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে মধু। রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধুর সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেস প্যাকের মতন লাগান। রোদে পোড়া জনিত কালো দাগ দূর হয়ে চেহারা হবে ঝলমলে।

৫)
মধুতে বিদ্যমান গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং শর্করা শরীরে শক্তি সবরাহের কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ মধু সারাদিনের জন্য দেহের পেশীর ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে ও আপনাকে রাখে এনার্জিতে ভরপুর।

৬)
প্রতিদিন ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে। এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে মধু রক্তস্বল্পতা রোগকে প্রতিরোধ করে।

৭)
মধু ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ঠোঁটে মধু লাগান। ঠোঁট হয়ে উঠবে নজর কাড়া সুন্দর।

৮)
মধুর ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, সি কপার , আয়োডিন ও জিংক দেহে এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে মধু কোলেস্টেরল সংক্রান্ত রোগ থকে দেহকে মুক্ত রাখে। দিনে অন্তত এক চামচ মধু খেয়ে নিন,যেভাবে আপনার ভালো লাগে।

৯)
সাইনাসের কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসের যে কোন সমস্যা থেকে মধুর প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ দেহকে মুক্ত রাখে। চা কিংবা উষ্ণ পানির সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।

১০)
প্রতিদিন মধু খাওয়া হলে দেহের ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি হয়। ফলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সহজে অসুখ বিসুখ ও জীবাণুর সংক্রমণ হয় না।
১১)
মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে আমাদের হজম শক্তি বাড়ে ও ফলে খাবারের ক্যালোরি দ্রুত ক্ষয় হয়। এতে ওজন কমে যায়। চিনির বদলে মধুর ব্যবহার মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে।

১২) 
যাদের খুসখুসে কাশির সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিন এক চামচ আদার রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। দ্রুত আরোগ্য হবে।

সকালে মাত্র এক চামচ মধুর ৬টি উপকারিতা

প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধ হিসেবে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চাইনিজরা প্রতিদিন দুধ ও মধু মিশিয়ে সেটা রুটি দিয়ে খেতো। এটা তাদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। আবার কেউ কেউ হালকা গরম পানিতে মধু দিয়ে অথবা চায়ের সাথে মধু দিয়ে খেতো। এখনও এই অভ্যাস অনেক চাইনিজদের মধ্যেই দেখা যায়।

সকাল বেলা এক চামচ মধু আপনার দিনের শুরুটাকে মধুর মত মিষ্টি করে দিবে। শুধু তাই নয়, মধুর আছে অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। আসুন দেখে নেয়া যাক প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খাওয়ার ৬টি উপকারিতা।




রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন। এতে মন ভালো হবে।

ওজন কমায়
প্রতিদিন সকালে মধু খেলে ওজন কমে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে বেশ খানিকটা ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে, শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।
হৃৎপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাসমধুর সাথে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। মধু ও দারচিনির এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়।

বেশি উপকার পেতে সকালের নাস্তার আগে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক চামচ মধু ও অল্প দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খান।

হজমে সাহায্য করে
যাদের নিয়মিত হজমের সমস্যা হয় তারা প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। মধু পেটের অম্লীয়ভাব কমিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করার জন্য মধু খেতে চাইলে প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।
শক্তি বাড়ায়মধুতে আছে প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। বিশেষ করে যাদের মিষ্টি খাবারের নেশা আছে তারা অন্য মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেয়ে নিন। কিছু মানুষ আছে যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভোগেন এবং এই সমস্যা দূর করার জন্য কিছুক্ষন পর পর চা কফি খায়। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।

ত্বক ভালো করেমধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান। ত্বকের যত্নে মধুর জুড়ি নেই। সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।

চিনির বিকল্প মধু

মৌমাছি কর্তৃক সংগৃহীত এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থই মধু। যা মৌচাকে সংরক্ষিত থাকে। এটি উচ্চ ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। মধু চিনির চেয়ে মিষ্টি এবং প্রকৃতি প্রদত্ত এক বিশুদ্ধ উপহার।

চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। ফলে দীর্ঘদিন অটুট থাকে মধু। মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প থাকায় প্রাকৃতিক বায়ু বাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় থাকতে পারে না। মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রতা থাকে প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে। আর্দ্রতার মাত্রা ১৮% এর নিচে থাকলে মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তবে পাস্তুরীকৃত মধুতে তার প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।

স্বাদ, রং, সুগন্ধ এবং ঔষধি গুণাবলীর জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু প্রসিদ্ধ। এখানকার বেশীর ভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন। সুন্দরবনে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা। গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীন কাল থেকে। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। মধুতে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকায় প্রাচীন গ্রিসের খেলোয়াড়রা মধু খেয়ে মাঠে নামতো।


উপকারিতা
মধু মস্তিষ্কের ক্রিয়া ক্ষমতা ভালো রাখে। এক কাপ গরম দুধের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে রাতে ভাল ঘুম হবে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মধু মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ঠাণ্ডায় বা সর্দি কাশিতে মধু ভালো কাজ করে। উচ্চ ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে মধুতে।

মধু হজমে সাহায্য করে। পেট রোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।

যে কোন ধরনের ত্বকে মধু ব্যবহার করা যায়।
মধু ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ত্বক হয়ে উঠে নরম, কোমল ও স্নিগ্ধ।

মধু দুধের সাথে অথবা ফেস প্যাকে মিশিয়ে ব্যবহার করলেই চলে।
ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

চিনির ক্ষতিকর দিক গুলো থেকে সহজে রক্ষা পেতে চিনির বিকল্প হিসেবে মধুর সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এতে করে এক দিকে যেমন মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যাবে অন্যদিকে স্বাস্থ্যের জন্যও ইতিবাচক হবে।

সুন্দরবনের খাঁটি মধু কি ঢাকায় পাওয়া যায়?



স্বাস্থ্য সু-রক্ষায় মধুর ব্যবহার

মধু একটি খুব উপকারী খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ। জন্মের পর নানা দাদীরা মুখে মধু দেয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন । প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃ...