বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

প্রতিদিন ১ চামচ মধুর এক ডজন স্বাস্থ্য উপকারিতা

মধু তার অসাধারণ ঔষধি গুনের কারনে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক দিকের জন্যই নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।
সর্বগুন সম্পন্ন এই মধুর গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা, সৌন্দর্য চর্চা- কোথায় নেই মধুর ব্যবহার? আসুন দেখে নেয়া যাক মাত্র এক চামচ মধু কি কি অসাধারণ উপকারে লাগতে পারে আপনার।

১)
মধু হিউম্যাকটেন্ট যৌগে সমৃদ্ধ। এই যৌগটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে এবং ত্বকের উপরিভাগের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। হিউম্যাকটেন্ট যৌগটি ত্বককে নমনীয় করতেও সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে দীর্ঘদিন বার্ধক্যের ছাপ মুক্ত। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু রঙ চা কিংবা দুধের সাথে খেতে পারেন। সেই সাথে আপনার রোজকার ফেস প্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন মাত্র এক চামচ মধু। মধু ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে ও মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে।

২)
মধু শরীরের ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। মধুতে মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। কোথাও পুরে, কেটে গেলে ক্ষত স্থানে মধুর একটি পাতলা প্রলেপ দিয়ে দিন। ব্যথা কমবে ও দ্রুত নিরাময় হবে। মধুতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পূঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।

৩)
মধুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ছত্রাক ও অন্যান্য কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে ঠিক করতে সাহায্য করে ও নতুন ত্বক গঠনে ভূমিকা রাখে। চর্মরোগ হলে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে মধু লাগান। এক চামচ মধুর সাথে অল্প পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

৪)
মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরের চামড়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে মধু। রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধুর সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেস প্যাকের মতন লাগান। রোদে পোড়া জনিত কালো দাগ দূর হয়ে চেহারা হবে ঝলমলে।

৫)
মধুতে বিদ্যমান গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং শর্করা শরীরে শক্তি সবরাহের কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ মধু সারাদিনের জন্য দেহের পেশীর ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে ও আপনাকে রাখে এনার্জিতে ভরপুর।

৬)
প্রতিদিন ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে। এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে মধু রক্তস্বল্পতা রোগকে প্রতিরোধ করে।

৭)
মধু ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ঠোঁটে মধু লাগান। ঠোঁট হয়ে উঠবে নজর কাড়া সুন্দর।

৮)
মধুর ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, সি কপার , আয়োডিন ও জিংক দেহে এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে মধু কোলেস্টেরল সংক্রান্ত রোগ থকে দেহকে মুক্ত রাখে। দিনে অন্তত এক চামচ মধু খেয়ে নিন,যেভাবে আপনার ভালো লাগে।

৯)
সাইনাসের কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসের যে কোন সমস্যা থেকে মধুর প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ দেহকে মুক্ত রাখে। চা কিংবা উষ্ণ পানির সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।

১০)
প্রতিদিন মধু খাওয়া হলে দেহের ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি হয়। ফলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সহজে অসুখ বিসুখ ও জীবাণুর সংক্রমণ হয় না।
১১)
মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে আমাদের হজম শক্তি বাড়ে ও ফলে খাবারের ক্যালোরি দ্রুত ক্ষয় হয়। এতে ওজন কমে যায়। চিনির বদলে মধুর ব্যবহার মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে।

১২) 
যাদের খুসখুসে কাশির সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিন এক চামচ আদার রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। দ্রুত আরোগ্য হবে।

সকালে মাত্র এক চামচ মধুর ৬টি উপকারিতা

প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধ হিসেবে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চাইনিজরা প্রতিদিন দুধ ও মধু মিশিয়ে সেটা রুটি দিয়ে খেতো। এটা তাদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। আবার কেউ কেউ হালকা গরম পানিতে মধু দিয়ে অথবা চায়ের সাথে মধু দিয়ে খেতো। এখনও এই অভ্যাস অনেক চাইনিজদের মধ্যেই দেখা যায়।

সকাল বেলা এক চামচ মধু আপনার দিনের শুরুটাকে মধুর মত মিষ্টি করে দিবে। শুধু তাই নয়, মধুর আছে অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। আসুন দেখে নেয়া যাক প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খাওয়ার ৬টি উপকারিতা।




রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন। এতে মন ভালো হবে।

ওজন কমায়
প্রতিদিন সকালে মধু খেলে ওজন কমে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে বেশ খানিকটা ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে, শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।
হৃৎপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাসমধুর সাথে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। মধু ও দারচিনির এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়।

বেশি উপকার পেতে সকালের নাস্তার আগে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক চামচ মধু ও অল্প দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খান।

হজমে সাহায্য করে
যাদের নিয়মিত হজমের সমস্যা হয় তারা প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। মধু পেটের অম্লীয়ভাব কমিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করার জন্য মধু খেতে চাইলে প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।
শক্তি বাড়ায়মধুতে আছে প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। বিশেষ করে যাদের মিষ্টি খাবারের নেশা আছে তারা অন্য মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেয়ে নিন। কিছু মানুষ আছে যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভোগেন এবং এই সমস্যা দূর করার জন্য কিছুক্ষন পর পর চা কফি খায়। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।

ত্বক ভালো করেমধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান। ত্বকের যত্নে মধুর জুড়ি নেই। সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।

চিনির বিকল্প মধু

মৌমাছি কর্তৃক সংগৃহীত এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থই মধু। যা মৌচাকে সংরক্ষিত থাকে। এটি উচ্চ ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। মধু চিনির চেয়ে মিষ্টি এবং প্রকৃতি প্রদত্ত এক বিশুদ্ধ উপহার।

চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। ফলে দীর্ঘদিন অটুট থাকে মধু। মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প থাকায় প্রাকৃতিক বায়ু বাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় থাকতে পারে না। মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রতা থাকে প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে। আর্দ্রতার মাত্রা ১৮% এর নিচে থাকলে মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তবে পাস্তুরীকৃত মধুতে তার প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।

স্বাদ, রং, সুগন্ধ এবং ঔষধি গুণাবলীর জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু প্রসিদ্ধ। এখানকার বেশীর ভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন। সুন্দরবনে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা। গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীন কাল থেকে। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। মধুতে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকায় প্রাচীন গ্রিসের খেলোয়াড়রা মধু খেয়ে মাঠে নামতো।


উপকারিতা
মধু মস্তিষ্কের ক্রিয়া ক্ষমতা ভালো রাখে। এক কাপ গরম দুধের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে রাতে ভাল ঘুম হবে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মধু মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ঠাণ্ডায় বা সর্দি কাশিতে মধু ভালো কাজ করে। উচ্চ ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে মধুতে।

মধু হজমে সাহায্য করে। পেট রোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।

যে কোন ধরনের ত্বকে মধু ব্যবহার করা যায়।
মধু ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ত্বক হয়ে উঠে নরম, কোমল ও স্নিগ্ধ।

মধু দুধের সাথে অথবা ফেস প্যাকে মিশিয়ে ব্যবহার করলেই চলে।
ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

চিনির ক্ষতিকর দিক গুলো থেকে সহজে রক্ষা পেতে চিনির বিকল্প হিসেবে মধুর সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এতে করে এক দিকে যেমন মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যাবে অন্যদিকে স্বাস্থ্যের জন্যও ইতিবাচক হবে।

সুন্দরবনের খাঁটি মধু কি ঢাকায় পাওয়া যায়?



স্বাস্থ্য সু-রক্ষায় মধুর ব্যবহার

মধু একটি খুব উপকারী খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ। জন্মের পর নানা দাদীরা মুখে মধু দেয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন । প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃ...